বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের নিত্যপণ্যের বাজারে। দাম বেড়েছে সবজি ও মুরগি সহ বিভিন্ন নিত্য পন্যে। ব্যবসায়িদের দাবি প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিতে বাজারে পণ্য সরবরাহ কম হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম সগরীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা সবজি বাজার ঘুরে উঠে এসেছে এসব চিত্র।
নগরীর কাজির দেউরি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি শসার দাম ৮০ টাকার উপরে। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, ঢেঁড়সের কেজি ৬০ টাকা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি করলা ৭০ টাকা ও বরবটি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আলু ২৮ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ধুন্দল ৭০ টাকা কেজি দরে এবং লাউ আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা এবং পেঁপে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আকার ভেদে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলার ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা নুরুন্নবী বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিতে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে সবজির দাম কমবে। বাজারে মুরগির দামও গেল কয়েক দিনের তুলনায় বেড়েছে। ব্রয়লার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে খামারে মুরগির উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারেও সরবরাহ কম। এসব কারণে দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন মুরগি বিক্রেতা সাহাবুদ্দিন।
তবে, আগের দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। ফার্মের লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আগের দামে হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এবং রসুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়, প্যাকেট চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লবণ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি মসুরের ডাল ১৪০ টাকা ও ভারতীয় মসুরের ডাল ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে পাইকারী বাজারে চালের দাম বস্তা প্রতি ১০০ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে প্রভাব নেই। চাল ব্রি-২৮ এর কেজি প্রতি দাম পড়ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।####
লোহাগাড়ায় চিতা ও মেছো বাঘসহ ২ পাচারকারী আটক
বশির আলমামুন , চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বন্যপ্রাণী পাচারের অভিযোগে দুজনকে আটক হরেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে লোহাগাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের আটক করা হয়। পুলিশ বলেছে তাদের কাছ থেকে একটি চিতা বিড়াল ও ৩টি মেছো বাঘের বাচ্চা এবং একটি বন মোরগ প্রজাতির মথুরাও উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন কুমিল্লার দেবীদ্বারের বালুঘাট এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে মো. এমরান (২৪) ও বান্দরবানের আলী কদম থানার ৭ নং ওয়ার্ডের সামশুল আলমের ছেলে মো. আলীম উদ্দিন (৩৭)।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, তাদের কাছে গোপন সোর্সের মাধ্যমে আগে থেকেই খবর আসে বান্দরবানের আলীকদম পাহাড় থেকে বেশ কয়েকটি বন্য প্রাণী সংগ্রহ করে তা চট্টগ্রাম শহরে পাচার করা হবে। এমন খবরে লোহাগাড়া বাসস্ট্যান্ডে বিশেষ তল্লাশী চৌকি বসানো হয়। এসময় দুই ব্যক্তি বন্য প্রাণী নিয়ে গাড়িতে উঠার সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি চিতা বিড়াল ও ৩টি মেছো বাঘের বাচ্চা এবং একটি বন মোরগ প্রজাতির মথুরাও উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত বন্য প্রাণীগুলো তারা আলী কদমের মুরং উপজাতী সম্প্রাদায়ের লোকজন থেকে কিনেছে। ওসি জানান, বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর ৩৪(খ) ধারায় আটক দুজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
মধ্যরাতে উঠছে নিষেধাজ্ঞা ; ইলিশ শিকারে সাগরে যেতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের জেলেরা
বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম : মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের দেওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ মধ্যরাতে। রাত ১২টা থেকে ইলিশ শিকারে নদীতে নামতে পারবেন জেলেরা। এজন্য আগ থেকেই তারা জাল-নৌকা নিয়ে কর্ণফুলী নদীর তীরে জড়ো হন সাগরে যেতে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে নৌকা ও জাল মেরামতের কাজ সম্পন্ন করেছেন তারা। রাতে মাছ শিকার করে জেলেরা শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালেই বাজারে হাজির হবেন। প্রজজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এই সময়ে ইলিশ পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় জেলে পরিবারগুলোতে উৎসব বিরাজ করছে।
চট্টগ্রামের কাট্টলী গ্রামের জেলে কিরণ জলদাশ ও কৃষণ জলদাশ, বলেন ‘আমরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা সবসময় পালন করি। মূলত আমরা বড় নৌকায় গুল্টিজাল বাই। নিষেধাজ্ঞার সময় নদী থেকে জাল ও নৌকা তুলে মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করি।’ তারা আরও বলেন, ‘এই ২২ দিন পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে গেছে। সরকার এ বছর ২০ কেজির জায়গায় ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু আমরা ২৫ কেজি পাইনি। আমাদের ২২-২৩ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। শুধু কি চাল দিয়েই সংসার চলে? সঙ্গে আরও অনেক কিছু দরকার।’ শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকালে নগরের ফিশারিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মধ্যরাতেই অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন সাগরে। আবার সকালেও সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক জেলে। গত বৃহস্পতিবার রাতেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কেউ মধ্যরাতে, কেউ কেউ ছুটেছেন ভোররাতে। সকালেও অনেকে রান্নার উপকরণ লাকড়ি যোগাড় করছেন। আবার কেউ কেউ শিকার করা মাছ সংরক্ষণ করতে ককশিটের বক্স ও বরফ প্রস্তুত করছেন। কেউবা ট্রলারগুলোর খন্দলে বরফ আর প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাগরযাত্রার। তেল, ড্রাম, রশি ও সব ধরনের সামগ্রী বোঝাই করার পর পরখ করে নেওয়া হচ্ছে ফিশিং ট্রলার।
দীর্ঘদিন সাগরে মাছ না ধরায় জালে বিপুল মাছ ধরা পড়ার আশা করছেন জেলেরা। তারা বলছেন, ২২ দিন ধরে সাগরে নামায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এসময়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ অবাধে বিচরণ ও বংশবিস্তার করেছে। ফলে এবার প্রচুর বড় আকারের ইলিশ পাওয়ার আশা করছি।
মহেশখালী থেকে আসা জেলে আলিম উদ্দিন বলেন, মাঝারি কিংবা বড় সাইজের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এবার ২২ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধার-দেনায় জর্জরিত আমরা। বাড়ি থেকে এসেছি তিনদিন আগে। এসে জাল, নৌকা ঠিক করছি। সব ঠিকঠাক করে আজকেই রওনা দিব মাছ ধরতে।
কর্ণফুলী এলাকার জেলে মোহাম্মদ হাসান বলেন, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে যেতে পারিনি। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। সাগরে যেতে পারবো বলে খুশি লাগছে।
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলেদের কিছু মাছ ধরার ট্রলার ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। যাদের ট্রলার ভালো আছে তারাই সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে অধিকাংশ ট্রলার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সাগরে নামতে পারছেন না। তারাও ট্রলার মেরামতের কাজ করছেন পুরোদমে।
জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে পার করেছেন। অনেক জেলেই ঋণগ্রস্থও হয়ে পড়েছেন। সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ঋণমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আরেক জেলে নেতা আশরাফ বলেন, ‘ট্রলারে এসে মন ভালো হয়েছে গেছে। ঋণ শোধের জন্য সাগরে যাবো। মাছ ধরবো আর অবতরণ কেন্দ্রে এসে বিক্রি করে ঋণ শোধ করবো’।
উত্তর চট্টলা উপকূলীয় জলদাস সমবায় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন জলদাস বলেন, ‘উত্তর চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৬০০ নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। অনেক জেলে চাল পাননি। জেলেরা অভাবে পড়ে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে। ’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘চট্টগ্রামে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৬ হাজার ৯৯২ জন। আমরা স্থানীয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী চাল দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, জেলেরা ২২ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ট্রলার সাগরে যেতে দেওয়া হয়নি। তাই নিষেধাজ্ঞার পরপরই জেলেরা গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যাচ্ছেন।
ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। বাংলাদেশের এ জাতীয় মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৫ শতাংশই উৎপাদন হয় এ দেশে। আর মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন নদী ও সাগর থেকে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে আহরণ করা হয়েছিল ৫ লাখ ৫০ হাজার টন। উৎপাদনের হিসাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা রয়েছে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে।
চট্টগ্রামে ধর্ষনের পর স্বাসরোধ করে শিশু হত্যা কারী গ্রেফতার
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানের লিচুবাগান এলাকার প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মারজানা হক বর্ষাকে (৭) ধর্ষনের পর স্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় লক্ষণ দাশ (৩০) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে লোহাগাড়ার উত্তর পদুয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে। তিনি নগরের জামালখান গোপাল মুহুরী গলি এ কে এম জামাল উদ্দিনের বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় শ্যামল স্টোর নামক দোকানের গোডাউনে বসবাস করতেন। তিনি মুদি দোকানটির কর্মচারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লক্ষণ মুদি দোকানটির মালিক। বর্ষাকে ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে মুখ ও নাক চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে স্বীতারোক্তি দিয়েছে গ্রেফতার কৃত লক্ষণ। হত্যার পরে দোকানের গোডাউনে রাখা টিসিবির সীলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে বর্ষার মরদেহ ঢুকিয়ে বাইরে এনে গোডাউনের ডান পাশে নালায় ফেলে দেয় হত্যাকারী লক্ষণ দাশ। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে এই তথ্য দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
উপ পুলিশ কমিশনার মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লক্ষণ দাশ বর্ষাকে বিভিন্ন সময়ে দোকান থেকে চিপস, চকলেট দিত। ঘটনার দিন বিকেলে ১শ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দোকানের গোডাউনে নিয়ে যায়। সেখানে মুখ ও নাক চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ বস্তায় ভরে নালায় ফেলে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর বর্ষার কাপড়চোপড় পেঁয়াজের খোসার বস্তার ভিতর খোসাসহ ঢুকিয়ে বস্তাটি একই জায়গায় নালায় ফেলে দেয়। আরও কিছুক্ষণ পর বর্ষার ব্যবহৃত স্যান্ডেলটি নিয়ে নালায় ফেলে দেয়। তিনি আরও বলেন, মরদেহ নালায় পাওয়ার পর যখন বস্তা কেটে বের করা হয় তখন আমাদের নজরে আসে- বস্তায় টিসিবির সীল আছে। সেই সূত্র ধরে টিসিবির সীলযুক্ত বস্তায় মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশপাশের বিভিন্ন রেস্তেুারাঁর গোডাউনে টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে শ্যামল স্টোর দোকানের গোডাউন চেক করার সময় একটি খালি টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা খুঁজে পাওয়া যায়। দোকানের মালিক ও কোন কোন কর্মচারী সেখানে কাজ করে, তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়। টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় আসামি লক্ষণ দাশকে শনাক্ত করি। এরপর জামালখান এলাকার শ্যামল স্টোর নামক দোকানের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত আসামি লক্ষণ দাশকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।
মারজানা হক বর্ষা (৭) চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার টামটা এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে। সে কুসুমকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ও নগরের জামালখান লিচুবাগান সিকদার হোটেলের পাশের বিল্ডিংয়ে পরিবারের সাথে বসবাস করতো।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, গ্রেফতার লক্ষণ দাশকে আদালতে পাঠানো হবে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) মারজানা হক বর্ষা বাসা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিপস কেনার জন্য গলির মুখে দোকানে যায়। ৩০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও বাসায় ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন বর্ষার বোন সালেহা আক্তার রুবি থানায় নিখোঁজ জিডি করেন। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে বেলাল হোসেন নামে একজন বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেয়। বিকেলে সিকদার হোটেলের পেছনের নালা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় বর্ষার মরদেহ পাওয়া যায়।
Leave a Reply